শিশুদের যোগ অভ্যাস

          শিশু বয়স থেকেই যোগাভ্যাস প্রয়োজন
-----------------------------------------------------------------
                   শংকরশ্রী সুদীপ্ত বিশ্বাস

(যোগাথেরাপিস্ট, ফিজিও, সোশ্যাল এ্যাক্টিভিষ্ট 
ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ: 8777857004)

সাধারণত ১ থেকে ১২ বয়সী ছেলে-মেয়েদের শিশু বলে মানি। আজ শিশুদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যচর্চা নিয়ে কিছু লিখবো। লেখাটা শিশুদের জন্য হলেও তাদের অভিভাবকদের উদ্দেশ্যেই লিখিত হবে কারণ এর মধ্যে এমন কিছু কথা থাকবে যেগুলোর অর্থ ছোট ছোট শিশুদের কাছে ঠিকভাবে বোধগম্য হবেনা ।অভিভাবক রাই এসবের অর্থ বুঝে নিয়ে তাদের এ ব্যাপারে ধীরে ধীরে উৎসাহিত করবেন ,পরিচালিত করবেন এই আশা রাখছি।

# কখন থেকে বা কোন বয়স থেকে যোগচর্চা------

অধিকাংশ শিশুরাই ছুটো -ছুটি করে খেলাধুলা করে, এসবের মধ্যে দিয়ে তাদের কিছু ব্যায়াম হয় যেগুলো তাদের পক্ষে উপকারী। তবুও এগুলোই যথেষ্ট নয়। এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়সের ছেলেমেয়েদের শুধুমাত্র ছোটাছুটি খেলাধুলার মধ্যেই ব্যায়াম সেরে নেওয়া ভালো কিন্তু পাঁচ বছর পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের শরীর ও মনের উপযোগী কিছু যোগাসন, deep breathing, প্রাণায়াম, মানসিক জপ ও ধানের চেষ্টা অনুশীলন করানো উচিত।

# উপকারিতা -----
নিয়মিত যোগাসন অভ্যাসের ফলে শরীরের ভেতরের গ্ল্যান্ড (গ্রন্থি) গুলো থেকে হরমোন (গ্রন্থিরস) ঠিক ঠিক পরিমাণে বের হয়। স্নায়ূমন্ডলী সতেজ থাকে ,শরীরের অন্যান্য কলকব্জাগুলো সঠিকভাবে চালু থাকে ও রক্ত সঞ্চালনের কোন গোলমাল হয় না। এসবের ফলে শিশুরা খাবার খেয়ে ঠিক মত হজম করতে পারে। নির্দিষ্ট সময় ধরে শান্ত হয়ে গভীরভাবে ঘুমিয়ে শান্তিময় বিশ্রাম পায়। পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজকর্মে প্রচুর উৎসাহ উদ্দীপনা লাভ করে। এমনকি ঘুরে বেড়ানোর সময়ও একটা সুখ উপলব্ধি করে।

# কি কি আসন খুব দরকার-----
পদ্মাসন, বজ্রাসন ,ভুজঙ্গাসন, ভদ্রাসন, গোমুখাসন,,, পদহস্তাসন ,পবনমুক্তাসন, অর্ধকূর্মাসন, ভুজঙ্গাসন, 
অর্ধশলভাসন , হলাসন প্রভৃতি।

# Deep breathing ও প্রাণায়াম -------
Deep breathing, চিদাভাস প্রাণায়াম ও অন্য দুই একটা প্রাণায়াম রোজ অভ্যাস করলে ফুসফুস , হৃদ যন্ত্র,্এসবের উপযুক্ত ব্যায়াম হয়। তার ফলে সর্দি কাশি, হাঁপানি ,হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা, ফুসফুসের সংক্রমণ---- এসব কিছুই হয় না। এতে শিশুর শারীরিক সফলতা ও আরাম যেমন বজায় থাকে তেমনই বুকের মধ্যে সবলতা থাকার দরুন তার ব্যক্তিত্বে আত্মবিশ্বাস বজায় থাকে।

# মানসিক জপ------

৩ রকমের জপ------বাচিক ,উপাংশু ও মানসিক জপ  এর মধ্যে সব শিশুদের জন্যই মূলত হাইপার এ্যাক্টিভ ডিসঅর্ডার (HAD) এ আক্রান্ত শিশুদের পক্ষে মানসিক জপ প্রতিদিন দুবেলা প্র্যাকটিস করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এতে শিশুর ধীর স্থির, শান্ত ভাব ,মনকে একাগ্র করার শক্তি, অনেকক্ষণ ধরে পড়াশোনা করার শক্তি, আচার -আচরণে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার শক্তি ধীরে ধীরে অর্জিত হয় ও সে সবার কাছে আদরের এবং প্রশংসার যোগ্য হয়ে ওঠে। 

# মেডিটেশন বা ধ্যান-------

ধ্যান যতটা প্রয়োজনীয়, ততটাই কঠিন কাজ। তবুও বলবো এই অস্থিরতার যুগে সিলেবাসের বোঝার চাপে ও নানা কর্মব্যস্ততার  জালে পড়ে শিশুরা যখন বিভ্রান্ত, ক্লান্ত তখন তাদের যদি শিশু বয়স থেকেই ধীরে ধীরে ধ্যানের জগতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তাদের শারীরিক ও মানসিক কত যে উপকার সাধিত হয় তা অভিভাবকরাই ক্রমান্বয়ে উপলব্ধি করতে পারবেন। তবে ধ্যান করার জন্য প্রথমেই যেটা দরকার সেটা হলো রোগমুক্ত শরীর, শারীরিক সক্ষমতা, যে সক্ষমতা তৈরি করতে পারে প্রতিদিনের যোগাসনের অনুশীলন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস , তার সাথে উপযুক্ত বিশ্রাম।

# দেশ- বিদেশের বিশেষজ্ঞদের মতামত------

ধ্যান বা মেডিটেশন সম্পর্কে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের psychiatrist John Denninger বলেছেন,"The kids of things that happen when you meditate do have effects though out of the body, not just in the brain." ২০১৪ র সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল যোগা কনফারেন্সের অর্গানাইজার Pleasance Silicki বলেছেন, Studies have shown yoga can be an effective way to help children reduce stress, improve concentration and manage emotions. yoga can also help children with attention deficit hyperactivity disorder(ADHD) and other behavioral problems." আমেরিকার ভান্ডারবিল্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ডাক্তার গুরজিৎ বিরদি বলেন,
" .... যোগা মাইড বি গুড ফর মুড  ইন চিলড্রেন,, সো হেল্পিং উইথ স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি এ্যান্ড ডিপ্রেশন।" 
যোগা ফিজিক ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশ্বশ্রী মনতোষ রায় -এর মন্তব্য,"....... যোগা, ব্যায়াম গুলো যদি মন প্রাণ দিয়ে এই ছোট্ট বয়স থেকে নিয়মিত অভ্যাস করতে পারো তবে এক সুন্দর দৈহিক এবং মানসিক পরিবর্তন তোমার দেহে ও মনে ধরা দেবেই দেবে।"

### সর্তকতা--------
 শিশুদের যোগাভ্যাস শুরু করানোর প্রারম্ভেই মনে রাখা উচিত হবে যে, এই ব্যাপারে পরামর্শ নেওয়ার জন্য কোন বই পড়ে, টিভি প্রোগ্রাম দেখে, অশিক্ষিত সাধারণ যোগা ট্রেনার এর কাছে প্রশিক্ষণ একেবারেই নয় তাতে ভালো ছেড়ে আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাদের যাওয়া উচিত যোগশাস্ত্রে  অনেক বেশি শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ কোন যোগাথেরাপিস্টের কাছে------তিনি বলে দিতে পারবেন কোন শিশুর কোন ক্ষেত্রে কোন কোন আসন, প্রাণায়াম ইত্যাদি দরকার, কতগুলো দরকার, কবে কবে তালিকা পরিবর্তন করতে হবে ,সঠিকভাবে অনুশীলন করতে না পারলে তার সহজ পদ্ধতি কি রকম হবে প্রভৃতি।
--------------------------------------------------------------------------
লেখক  শ্রী বিশ্বাস UGC-HRDC/ ASC, ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির যোগ বিষয়ক রিসোর্স পার্সন, শংকর শ্রী,ন্যাশনাল সায়েন্স ডে অ্যাওয়ার্ড, যোগপুরুষ সম্মান,
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন সম্মান প্রাপক। এছাড়া সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে সংবর্ধনা পেয়েছেন অনেকবার। যোগাসন ,প্রাণায়াম ,ধ্যান ও স্বাস্থ্য বিষয়ের ট্রেনার এবং বক্তা ------বিভিন্ন স্কুল , বিভিন্ন কলেজ, ইউনিভার্সিটি, অন্যান্য সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক রাজদীপ যোগা এ্যান্ড কালচারাল সোসায়িটি (সরকার অনুমোদিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা) স্থাপিত: ২০০৬ । প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পরিচালক, অভিজ্ঞান যোগা এ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টার
(স্থাপিত: ২০০০) ।
সম্পাদক ,রাজদীপ পত্রিকা। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যোগথেরাপি ও ফিজিওথেরাপি বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আছেন। শ্রীরামপুর , হুগলী, পশ্চিমবঙ্গ, 
ভারতবর্ষ।
------------------------------------------------------------------------



Comments